অপরাজিতা বিল: বাংলায় ধর্ষণ ও যৌন অপরাধ রোধে এক নতুন যুগের সূচনা
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় সর্বসম্মতভাবে পাস হয়েছে ‘অপরাজিতা নারী ও শিশু (ক্রিমিনাল লজ সংশোধনী) বিল, ২০২৪’। এই আইন বাংলার ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত তৈরি করেছে, যেখানে যৌন অপরাধ—বিশেষত ধর্ষণ—দমনে এতটা কার্যকর ও কড়া পদক্ষেপ আগে কখনও নেওয়া হয়নি।
🔑 মূল বৈশিষ্ট্য ও পরিবর্তন
-
মৃত্যুদণ্ড বাধ্যতামূলক: অপরাধের ফলস্বরূপ ভিকটিম মারা গেলে বা চিরস্থায়ী কোমায় চলে গেলে ধর্ষকের জন্য বাধ্যতামূলক মৃত্যুদণ্ড নির্ধারিত হয়েছে। গ্যাং-রেপ, পুনরাবৃত্ত ধর্ষণ, রাষ্ট্রকর্মীর দ্বারা ধর্ষণ—এইসব ক্ষেত্রেও মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের ব্যবস্থা।
-
তড়িৎ বিচার: অভিযোগপত্র জমার ২১ দিনের মধ্যে তদন্ত সম্পূর্ণ করতে হবে; তার পর ৩০ দিনের মধ্যে বিচারকাজ শেষ করার নিয়ম বাধ্যতামূলক।
-
বিশেষ আদালত ও টাস্ক ফোর্স: একাধিক দ্রুত বিচার আদালত এবং প্রতিটি জেলায় 'অপরাজিতা টাস্ক ফোর্স' গঠনের বিধান, ডাক্তারি পরীক্ষাপত্র দাখিল থেকে শুরু করে প্রমাণ সংগ্রহের স্বচ্ছ্বতা রক্ষা।
-
ভিকটিমের গোপনীয়তা: ভিকটিমের পরিচয় প্রকাশ বা বিচারকাজের তথ্য প্রকাশে ৩-৫ বছরের কারাদণ্ড।
-
পুলিশ ও স্বাস্থ্য আধিকারিকদের নিষ্ক্রিয়তা: তদন্তে বিলম্ব, প্রমাণ নষ্ট করলে সংশ্লিষ্ট অফিসারদের বিরুদ্ধেও কঠিন শাস্তির বিধান।
-
শিশুদের সুরক্ষা: পক্সো আইনে সংশোধনী—শিশুদের যৌন অপরাধে সর্বনিম্ন সাজা বৃদ্ধি ও গুরুতর অপরাধে মৃত্যুদণ্ড।
আইন পাসের পটভূমি
RG Kar মেডিকেল কলেজে এক তরুণী চিকিৎসকের ওপর নির্মম ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার পর তীব্র গণআন্দোলন ও প্রতিবাদের ফলেই এই উল্লেখযোগ্য আইনটি দ্রুত পাস হয়। এই আইন বাংলার মধ্যে বিরল ঐক্য এবং শক্তিশালী সামাজিক বার্তা বহন করে।
বিতর্ক ও আলোচনা
জাতীয় ও আইনি মহলে আইনটির কিছু দিক নিয়ে বিতর্ক আছে, বিশেষত মৃত্যুদণ্ড বাধ্যতামূলক করার প্রবণতা এবং বিচারকের স্বাধীনতা সীমিত করা নিয়ে। তবু বাংলার বহু নাগরিক ও বিশেষজ্ঞের মতে, এই আইন সামাজিক নিরাপত্তা ও নারী-শিশু সুরক্ষার প্রয়াসে একটি শক্তিশালী বার্তা1234।
উপসংহার:
‘অপরাজিতা বিল’ বাংলায় নারী ও শিশু সুরক্ষার এক নতুন প্রতিশ্রুতি। দ্রুত বিচার, কঠোর শাস্তি ও প্রতিটি পর্যায়ে স্বচ্ছতা—এই আইন সমাজে ভয়াবহ অপরাধ রুখতে নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে।
Comments
Post a Comment